পরিচিতি:-
অর্জুন গাছ চিরসবুজ বৃক্ষ প্রজাতির গাছ। কান্ড লম্বা ও শাখা প্রশাখা যুক্ত। অর্জুন গাছ লম্বায় প্রায় 50 থেকে 80 ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। গাছের বাকল ধূসর রঙের হয়ে থাকে, পুরো ও মসৃণ।
পাতা সরল ,আয়তকার, সবুজ রঙ্গের, দেখতে অনেকটা পেয়ারা পাতার মতো। পাতা লম্বা প্রায় 8 থেকে 11 সেমি, এবং চাওড়া 4 থেকে 6 সেমি। শীতকালে গাছের পাতা ঝরে যায়। এবং গাছে বসন্তের আগমনে নতুন পাতা গজায়।
ফুল খুব ছোট এবং মঞ্জুরি দণ্ডের চারদিকে সজ্জিত থাকে।রঙ সাদা বা হালকা হলুদ হয়।এর ফল দেখতে কামরাঙার মতো। কিন্তু আকরিতিতে কামরাঙার চেয়ে ছোট । গাছে প্রচুর পরিমাণে ফল ধরে,ফল গুলো শক্ত হয়ে থাকে। উপরের অংশে 4-5টিখাজ আছে, লম্বায় প্রায় 2সেমি হয়।
১.হৃদরোগের মহৌষধ অর্জুন গাছ:
অর্জুনের প্রধান ব্যবহার হৃদরোগ। অর্জুন ছালের রস কো-এনজাইম কিউ-১০ সমৃদ্ধ।
এ কো এনজাইম কিউ-১০ হৃদরোগ এবং হার্ট এ্যাটাক (Heart attacks) প্রতিরোধ করে। বাকলের রস ব্লাড প্রেসার (Blood pressure) এবং কোলেস্টেরল লেভেল কমায়।
অর্জুনের ছাল বেটে রস খেলে হৃদপিণ্ডের পেশি শক্তিশালী হয় এবং হৃদযন্ত্রের ক্ষমতা বাড়ে। বাকলের ঘন রস দুধের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে হবে।
বাকলের রস না থাকলে শুকনো বাকলের গুড়া ১-২ গ্রাম দুধের সাথে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে হবে।
২. বুক ধড়ফড়ানি:
যাদের বুক ধড়ফড় করে অথচ উচ্চ রক্তচাপ নেই, তাদের পক্ষে অর্জুন ছাল কাঁচা হলে ১০-১২ গ্রাম, শুকনা হলে ৫-৬ গ্রাম একটু ছেঁচে ২৫০ মি.লি. দুধ ও ৫০০ মি.লি. পানির সাথে মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে আনুমানিক ১২৫ মি.লি. থাকতে ছেঁকে বিকেলে খেলে বুক ধড়ফড়ানি অবশ্যই কমবে।
তবে পেটে যেন বায়ু না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। লো-ব্লাড প্রেসারে উপযুক্ত নিয়মে তৈরি করে খেলেও অবশ্য প্রেসার বাড়বে।
৩. রক্ত পিত্তে:
মাঝে মাঝে কারণে বা অকারণে রক্ত ওঠে বা পড়ে। সেক্ষেত্রে ৪-৫ গ্রাম ছাল রাত্রিতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেঁকে নিয়ে পানিটা খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৪. এ্যাজমা:
অর্জুন ছালের পাউডার ১২ গ্রাম দুধের ক্ষীর বা পায়েসের সাথে মিশিয়ে খেলে এ্যাজমা আক্রান্ত ব্যক্তির এ্যাজমা রেগের স্থায়ী সমাধান হবে।
৫. ক্ষয়কাশে:
অর্জুন ছালের গুঁড়া, বাসক পাতার রসে ভিজিয়ে শুকিয়ে রাখতেন প্রাচীন বৈদ্যরা। দুমকা কাশি হতে থাকলে একটু ঘি ও মধু বা মিছরির গুঁড়া মিশিয়ে খেতে দিতেন। এতে কাঁশির উপকার হত।
৬. ত্বকের সমস্যায়:
ত্বকে ব্রনের ক্ষেত্রে অর্জুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ছালের চূর্ণ মধুর সাথে মিশিয়ে ব্রণের উপর লাগালে খুব দ্রুত উপকার হয়। এছাড়া ছালের মিহি গুঁড়া মধু মিশিয়ে লাগালে মেছতার দাগ দূর হয়।
৭. ফোঁড়া:
ফোঁড়া হলে পাতা দিয়ে ঢেকে রাখলে ফোঁড়া ফেটে যায়, তারপর পাতার রস দিলে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়।
৮. ক্ষত বা ঘা:
শরীরে ক্ষত বা ঘা হলে, খোঁস-পাঁচড়া দেখা দিলে অর্জুনের ছালের কাথ দিয়ে ধুয়ে ছালের মিহি গুঁড়া পানি দিয়ে মিশিয়ে লাগালে দ্রুত ঘা সেরে যায়।
৯. কানের ব্যথায়:
কানের ব্যথায় অর্জুন ব্যবহার করা হয়। কচি পাতার রস কানের ভেতরে দুই ফোটা করে দিলে কানের ব্যথা ভাল হয়।
১০. হাড় মচকে গেলে বা চিড় খেলে:
অর্জুন ছাল ও রসুন বেটে অল্প গরম করে মচকানো জায়গায় লাগিয়ে বেঁধে রাখলে সেরে যায়। তবে সেই সাথে অর্জুন ছালের চূর্ণ ২-৩ গ্রাম মাত্রায় আধা চামচ ঘি ও সিকি কাপ দুধ মিশিয়ে অথবা শুধু দুধ মিশিয়ে খেলে আরও ভাল হয়।
১১. যৌন রোগ:
যাদের মধ্যে যৌন অনীহা (Libido) দেখা দেয় তাদের ক্ষেত্রে অর্জুনের ছাল চূর্ণ উপকারী। এ ছাল চূর্ণ দুধের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত খেলে এ রোগ দূর হয়।
এছাড়া যাদের শুক্রমেহ (Spermatorrhoea) আছে তারা অর্জুন ছালের গুঁড়া ৪-৫ গ্রাম ৪-৫ ঘন্টা আধা পোয়া গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে, তারপর ছেঁকে ঐ পানির সাথে ১ চামচ শ্বেতচন্দন মিশিয়ে খেলে উপকার হয়।
এটা সুশ্রুত সংহিতার কথা।
informative
You must be logged in to post a comment.