শসা একটি ফল। যার বিজ্ঞানসম্মত নাম -Cucumis sativus. ডায়াবেটিস রোগী নিয়মিত ভাবে শসা ভক্ষণ করলে ব্লাড সুগার কমে যায়। কাঁচা শসা লবন মিশিয়ে খাওয়া হয় বা স্যালাড করে খাওয়া হয়। পরিণত শসা রান্না করে খাওয়া হয়। বীজের তেল মস্তিস্ক ও দেহের জন্য উপকারী। সেজন্য শসার চাহিদা বাজারে সবসময়ই রয়েছে। তাই শসা চাষ চাষীভাইদের কাছে সবথেকে লাভজনক চাষ। তবে শসা চাষের পদ্ধতি অবশ্যই ভালোকরে জানতে হবে। চাষের পদ্ধতি বিস্তারিত নীচে আলোচনা করলাম, জেনেনিন কীভাবে করবেন ?
শসার বিভিন্ন জাত:
শসার বিদেশী জাতই বেশি। যেমন, জাপানীজ লং গ্রীন, স্টেট এইট, পয়েনস্টে, ক্ষীরপাতি, ক্যারিপসো বারপাতা, বর্ষাতি, অলসিজল, দার্জিলিং, সিকিম, বালার ক্ষীরা এবং ক্ষীরা পুনা উল্লেখযোগ্য। হাইব্রিড প্রিয়া, পুসা সংযোগ ইত্যাদি।
মাটি তৈরীর পদ্ধতি:
পানিনিকাশের ব্যবস্থাসহ বেলে দোঁয়াশ, এঁটেল দোঁয়াশ ও পলিমাটিতে এর চাষ ভাল হয়। ৩-৪ বার লাঙ্গল চালিয়ে এবং মই দিয়ে মাটি তৈরী করতে হবে।
বীজশোধন পদ্ধতি:
যে পানিতে বীজ বোনার আগে ভেজানো হবে, সেই পানিতে লিটার প্রতি ২ গ্রাম কার্বেনডাজিম দিতে হবে। অন্যভাবে সাধারণ পানিতে বীজ ভেজানোর পর কেজি প্রতি বীজে ৪ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি নামক জৈব ছত্রাকনাশক মেশানো হয়।
বীজ বপনের পদ্ধতি :
মাটিটা কাদার মতো তৈরী করে নিয়ে বা লাইন করে সমান ব্যবধানে ২-৩ টি বীজ বসাতে হয়। সারি থেকে সারি দেড় থেকে দুই মিটার এবং গাছের দূরত্ব হয়ে ৬০ থেকে ৯০ সেমি।
বীজের পরিমাণ : প্রতি একর জমিতে বীজ লাগবে এক কেজি।
শসার বীজ বপনের সময় :
(১) গ্রীষ্মকালীন - জ্যৈষ্ঠ - মে-জুন (২) বর্ষাকালীন আসার (জুন - জুলাই) মাস। এবং (৩)শীতকালীন অগ্রহায়ণ - পৌষ (নভেম্বর - জানুয়ারী) উঁচু অঞ্চল হলে এপ্রিল মাস।
সার প্রয়োগ পদ্ধতি:
প্রতি একর জমির জন্য ২০ গাড়ি গাবোর সার বা আবর্জনা সার এবং ২৫ কেজি, ইউরিয়া, ৩০ কেজি, সিঙ্গল সুপার ফসফেট ও ৩০ কেজি, মিউরেট অব পটাশ দরকার জমিতে শেষ চাষ করার সময়। এছাড়া চারার ৩ সপ্তাহ ও ৬ সপ্তাহ বয়সে দুবার প্রতিবারে ১০ কেজি ইউরিয়া চাপান দিতে হবে।
পুং ও স্ত্রীফুল :
সাধারণত ফলন কতো পরিমাণ হবে সেটা নির্ভর করে গাছে পুরুষ ও স্ত্রীফুলের সংখ্যার উপর। বাজারে জিব্রালিক এসিড প্লেজির নামে পাওয়া যায়। এর মাত্রা কমিয়ে বাড়িয়ে শসা গাছের পাতায় স্প্রে করলে পুরুষ ও স্ত্রীফুলের সংখ্যা বাড়ানো যায়।প্ল্যানোফিকস, এপ্রোনা, বর্ধক, বুষ্ট, এসবের মধ্যে যে কোনো একটি হর্মোন পরিমাণ মতো স্প্রে করতে পারেন।
শসা চাষে রোগ-পোকা নিয়ন্ত্রনের পদ্ধতি : ফলের মাছি :
কচি ফলের ওপর ছিদ্র করে ডিম পাড়ে এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। বাচ্চা পোকা ফলের নরম অংশ খেতে শুরু করে। এর ফলে ফল বেঁকে যায়। ২ লিটার জলে ৫০০ গ্রাম গুড়, ২০ গ্রাম কার্বারিল ও ২০ গ্রাম ইস্ট গোলা হয়। ঐ জল অল্প অল্প করে অনেকগুলি পাত্রে নিয়ে ক্ষেতে বসালে মাছি এই পাত্রের মিশ্রণে আকৃষ্ট হয় এবং মারা যায়। এছাড়া প্রতি লিটার জলে ০.৭৫ মিলি নুভান গুলে স্প্রে করা যায়।
নালী পোকা বা লিফ মাইনর :
পাতার দু' ত্বকের মাঝে সুড়ঙ্গ সৃষ্টি করে। সুড়ঙ্গের মধ্য থেকে সবুজ অংশ খেতে খেতে এগোয়। ওপর থেকে দেখলে পাতায় আঁকা বাঁকা দাগ লক্ষ্য করা যায়। পাতা ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। প্রথমদিকে প্রতি লিটার জলে ৫ গ্রাম নিমবীজ গুঁড়ো বা ৩ মিলি অ্যাজাডাইরেক্টিন (২ শতাংশ ইসি) গুলে স্প্রে করলে কাজ পাওয়া যায়। পরে প্রতি লিটার জলে ২ মিলি রোগার বা ০.৭৫ গ্রাম অ্যাসাটাফ গুলে স্প্রে করা হয়।
শুকনো পচা :
গাছের গােড়ার পাতার কিনারা থেকে বাদামী রঙ ধরে। তারপর শুকোতে শুরু করে। ধীরে ধীরে ওপরের দিকের পাতাতে সংক্রামিত হয়। প্রতি লিটার জলে ১ গ্রাম ব্যাভিস্টিন বা ০.৫ গ্রাম ইন্ডেক্স বা ০.৭৫ মিলি টিল্ট গুলে স্প্রে করা হয়।
সাদা পাউডার রোগ :
পাতায় ধূসর দাগ হয়। ঐ দাগের ওপর সাদা পাউডার জমে। আঙুল ছোঁয়ালে পাউডার লেগে যায়। পরে পাতা শুকিয়ে যায়। প্রতি লিটার জলে ০.৭৫ মিলি টিল্ট বা ১ গ্রাম ব্যাভিস্টিন বা ০.৫ মিলি ক্যালিক্সিন গুলে স্প্রে করা হয়।
very nace.
You must be logged in to post a comment.