মধু - Honey
প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ মধু ব্যবহার করে আসছে। কখনো তা ব্যবহৃত হয়েছে খাবার হিসেবে, কখনো ঔষধের অনুষঙ্গ হিসেবে। বিশেষ করে ভারতীয় আয়ুর্বেদ চিকিৎসাশাস্ত্রে মধুর ব্যবহার বেশ ব্যাপকভাবেই দেখা যায়। আর যাবেই না বা কেন? মধুর গুণ এবং উপকারিতাও কম নয়! জেনে নিন কিছু শারীরিক সমস্যার ঘরোয়া চিকিৎসায় মধুর ব্যবহার।
১। দুর্বলতা
মধু তাপ ও শক্তির একটি অত্যন্ত ভালো উৎস। এতে যে শর্করা থাকে তা সহজেই হজম হয় ও রক্তের সাথে মিশে যায়। মধুতে রয়েছে ডেক্সট্রিন, যা সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করে। ফলে দেহ সহজেই শক্তির জোগান পায়। দুই চা চামচ মধু এক কাপ ফুটানো পানির সঙ্গে খেলে শরীর ঝরঝরে হয় ও দুর্বলতা কেটে যায়।
২। কোষ্ঠকাঠিন্য
১ চা চামচ খাঁটি মধু ১ কাপ উষ্ণ গরম পানির সাথে মিশিয়ে সকালবেলা খালিপেটে পান করলে কোষ্ঠবদ্ধতা এবং অম্লত্ব দূর হয়।
৩। রক্তস্বল্পতা
মধু খেলে উপকার পাওয়া যায় রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়াতেও। মধু রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে। ফলে এটি রক্তস্বল্পতা দূর করতে সহায়তা করে। মধুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কপার, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ।
৪। ব্যথা
মধু যেকোনো ধরনের ব্যথাকে প্রশমিত করে এবং জীবাণুনাশকের কাজ করে। বিশেষ করে ফোঁড়া ও ক্ষতের ব্যথায় বেশ ফলদায়ক। সমপরিমাণ মধু ও চিনির সাথে দারুচিনি গুঁড়ো মিশিয়ে ব্যথা বা ফোঁড়ার স্থানে লাগান। সম্ভব হলে হালকা ম্যাসাজ করুন। জাদুর মতো কাজ করবে। পিঁপড়া বা মৌমাছির কামড়ে আক্রান্ত স্থানে মধু লাগালেও ব্যথা কমে যায়।
৫। অনিদ্রা
ঘুমের সমস্যায় হালকা গরম দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে পান করলে উপকার পাওয়া যায়। আধা গ্লাস হালকা গরম দুধের সাথে ২ চা চামচ মধু মিশিয়ে খেলে ভালো ফল দেয়। আর ঘুমটাও গভীর ও শান্তির হয়।
৬। সর্দি-কাশি
সাধারণ সর্দি-কাশিতে মধু খুবই উপকারী। ১ চা চামচ মধুর সাথে ১ চা চামচ তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খেলে কাশি উপশম হয়। গলা ব্যথা কমাতে হালকা গরম পানির সাথে মধু ও লবণ মিশিয়ে গারগল করলে উপকার পাওয়া যায়।
৭। দাঁতের সমস্যা
দাঁতের সুরক্ষায় খুবই উপকারী। মধু দাঁতের ওপর ব্যবহার করলে দাঁতের ক্ষয়রোধ করে, দাঁতে পাথর জমাট বাঁধা রোধ করে এবং দাঁত পড়ে যাওয়াকে বিলম্বিত করে। মধু মিশ্রিত পানি দিয়ে কুলি করলে মাঢ়ির প্রদাহ দূর হয়।
৮। হজমের সমস্যা
মধু পাকস্থলীর কাজকে জোরালো করে এবং হজমের গোলমাল দূর করে। মধু হাইড্রোক্রলিক অ্যাসিডের ক্ষরণ কমিয়ে দেয় বলে অরুচি, বমিভাব, বুক জ্বালা ইত্যাদি দূর হয়ে যায়। অ্যাসিডিটি বা অন্য কোনো সাধারণ কারণে পাকস্থলীতে ব্যথা হলে গরম পানির সাথে মধু ও তার অর্ধেক পরিমাণ দারুচিনি মিশিয়ে পান করুন। ব্যথা উপশম হবে।
৯। বাতের ব্যথা
এক কাপ গরম পানির মধ্যে ২ চা চামচ মধু আর ১ চা চামচ দারুচিনি গুঁড়ো মিশিয়ে পান করুন প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায়। এক সপ্তাহের ভেতরেই উপকার পাবেন ৷
মানব দেহে মধুর উপকারীতা সবারই কম বেশি জানা আছে। তাই নানা প্রয়োজনে একটুখানি খাঁটি মধুর খোঁজ অনেকেরই করতে হয়। সব মধুর চেহারা একই রকম হওয়ায় বোঝা দায় কোনটি আসল, কোনটি নকল। তবে আপনার যদি কিছু কৌশল জানা থাকে তবে এক মিনিটেই চিনে নিতে পারবেন আসল মধুটি। সেজন্য আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে,
- এক গ্লাস পানিতে এক চামচ পরিমাণ মধু দিন। তারপর আস্তে আস্তে গ্লাসটি নাড়া দিন। মধু পানির সঙ্গে মিশে গেলে নিশ্চিত হবেন সেটা ভেজাল মধু। আর মধু যদি ছোট পিণ্ডের মতো গ্লাসের পানিতে ছড়িয়ে যায়, তাহলে বুঝবেন সেটা খাঁটি মধু।
- পরিস্কার সাদা কাপড়ে অল্প একটু মধু লাগিয়ে শুকিয়ে নিন। একটু পর কাপড়টি ধুয়ে ফেলুন। কাপড়ে দাগ থেকে গেলে বুঝতে হবে এই মধু নকল। আর কাপড়ে দাগ না থাকলে সেটা খাঁটি মধু।
- মধুর আসল-নকল নির্ধারণ করতে এক টুকরো কাগজে অল্প একটু মধু লাগিয়ে নিন। এবার যেখানে পিঁপড়া আছে সেখানে রেখে দিন। তারপর অপেক্ষা করতে থাকুন। মধুতে যদি পিঁপড়া ধরে তাহলে বুঝে নেবেন আপনার কেনা মধুতে ভেজাল আছে।
এছাড়াও একটু সময় নিয়ে যদি যাচাই করতে চান আপনার কেনা মধুটি আসল না নকল তাহলে,
- মধু ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। ভেজাল মধু হলে এটা জমে যাবে। আর না জমলেও ভেজাল মধুর নিচে জমাট তলানি পড়বে।
মাশরুম গুণাবলী
মাশরুম যে এক ধরনের ছত্রাক এটা মোটামুটি সকলেরই জানা। আর এর সুস্বাদ সম্পর্কে হয়তো সকলের জানা নেই। তাই বলবো সুস্বাদু খাবারের আরেক নামই হচ্ছে মাশরুম।
ছত্রাক হলেও অধিকাংশ মাশরুমই ব্যাসিডিওমাইকোটা এবং কিছু অ্যাসকোমাইকোটার অন্তর্ভুক্ত। অন্যান্য উদ্ভিদের ন্যায় মাশরুমের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্য তৈরির জন্য সূর্য থেকে আলোর প্রয়োজন পড়ে না। অন্ধকার আর স্যাঁতসেঁতে জায়গাতেই বরং ভালো জন্মায় মাশরুম। পৃথিবীতে এ পর্যন্ত প্রায় চৌদ্দ হাজার প্রজাতির মাশরুমের কথা জানা যায়। তবে সেগুলোর মাঝে বেশির ভাগই খাওয়ার অযোগ্য। কিছু কিছু প্রজাতি মারাত্মক বিষাক্ত। অনেক প্রজাতির মাশরুম এক রাতের মধ্যেই উৎপাদিত হতে দেখা যায়। তবে অধিকাংশই ধীরে ধীরে বড় হয়। প্রাকৃতিক মাশরুমের চাইতে আবাদকৃত মাশরুম আকারে ক্ষুদ্রাকৃতির হয়ে থাকে।
১। খাবার উপযোগী অংশটি অল্প কিছুদিন সতেজ থাকে। বিশ্বের অধিকাংশ মাশরুমেই একটি দ- এবং ছাতার ন্যায় একটি টুপি থাকে।
২। দেহের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস দমনে মাশরুমের জুড়ি নেই।
৩। এতে রয়েছে- প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, অ্যামিনো অ্যাসিড, অ্যান্টি বায়োটিক ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। কাঁচা অবস্থায় এতে ভিটামিন বি খাদ্যপ্রাণ থাকে যাতে রিবোফ্লোবিন, নায়াসিন এবং প্যান্টোথেনিক এসিড থাকে।
৪। এছাড়াও, প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান যথা- সেলেনিয়াম, কপার এবং পটাসিয়াম থাকে। ভিটামিন বি খাদ্যকে গ্লুকোজে রূপান্তরিত করে। আর গ্লুকোজ থেকেই তৈরি হয় আমাদের দেহের শক্তি। তাছাড়া ভিটামিন বি খাদ্য বিপাক প্রক্রিয়াকেও সক্রিয় করে। সেলেনিয়াম উপাদানটি শুধু মাছেই পাওয়া যায়। যারা পুরোপুরি নিরামিষভোজী তারা মাশরুমের মাধ্যমে এই উপকারী উপাদানটি গ্রহণ করতে পারেন।
৫। মাশরুম কোলেস্টোরল শূন্য। এতে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণও খুবই সামান্য। এতে যে এনজাইম ও ফাইবার আছে তা দেহে উপস্থিত বাকি ব্যাড কোলেস্টোরলের বসতিও উজাড় করে দেয়।
৬। মাশরুম একমাত্র সবজি ও দ্বিতীয় খাদ্য উপাদান (প্রথম কডলিভার ওয়েল) যাতে ভিটামিন ডি ভোজ্য আকারে পাওয়া যায়। অন্য কোনো খাদ্য উপাদানে ভোজ্য আকারে ভিটামিন ডি পাওয়া যায় না।
৭। মাশরুমকে চিকিৎসকেরা এক সময় প্রাকৃতিক ইনসুলিন, আবার আরেক সময় প্রাকৃতিক অ্যান্টি বায়োটিক হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
৮। দেহের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ ও দেহের বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন দূর করতে ভালো কাজ করে মাশরুম।
৯। মাশরুমে আরো রয়েছে- এরগোথিওনেইন নামে এক ধরনের শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা মানবদেহের জন্য ঢালের মতো কাজ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যকারিতা বাড়ানোর পাশাপাশি অনেক ব্যাকটেরিয়াও দমন করে।
১০। নিরামিষভোজী বিশ্বে মাশরুম মাংস হিসেবে পরিচিত।
১১। খাবার উপযোগী মাশরুম সাধারণত- চীনা, কোরিয়ান, ইউরোপীয়ান এবং জাপানিজ রান্নায় ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশেও দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে এ খাবার (মাশরুম)। আজকাল বেশ অল্প মূল্যেই মিলছে এ মাশরুম। ওমলেট থেকে শুরু করে পাস্তা, রোল, স্যুপ ইত্যাদি হরেক রকমের মজাদার খাবার তৈরি করে খেতে পারেন মাশরুম দিয়ে।
Nice
nice
Nice
Share dilam
Nice
Nice
You must be logged in to post a comment.