আসসালামু আলাইকুম পাঠক পাঠিকা গন সবাই কেমন আছেন। নিশ্চয়ই ভালো আছেন। আল্লাহ তায়ালা কাছে এই দোয়া করি যে সবাই ভালো থাকুক এবং সুস্থ থাকুক।তো চলুন আমাদের সমাজের মধ্যে বিত্ত দের কিছু কথা জেনে নেই। আমি এখানে কাওকে উদ্দেশ্যে করে বলছি না এটা সকল মধ্যবিত্ত দের নিয়ে বলছি।তাহলে শুরু করা যাক। আমাদের এই সমাজে তিন শ্রেণীর মানুষ আছে। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত। আর এই তিন শ্রেণীর মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে দুর্ভাগা ও অবজ্ঞার যে শ্রেণীটি তা হলো মধ্যবিত্ত, তারা কাউকে কিছু দিতে পারে না, আবার কারো কাছে চাইতেও পারে না, লোকলজ্জার ভয় আর সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে।
জব্বার মিঞা, রাস্তা দিয়ে একা একা হাঁটছে, আর চিন্তা করছে, আজ তার ছোট মেয়েটার স্কুলে ভর্তি ফির টাকা জমা দিতে হবে। কারো কাছে ধার চেয়ে তো পেলাম না। আমার পকেটে একটি টাকা পর্যন্ত নেই, মেয়ের ভর্তির টাকা কেমনে জোগাড় করব, আর কিভাবেই বা আজ বাজার সদাই করব? ওই দিকে স্ত্রী অপেক্ষা করছে, বাজার নিয়ে গেলে রান্না করবে, সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেবে। এক ছেলে, এক মেয়ে ও আমরা স্বামী-স্ত্রীসহ চারজনের সংসারে আমি একাই জোগানদাতা। সরকারি চাকরিটা যত দিন ছিল, তখন তো মোটামুটিভাবে চলতে পেরেছি, এখন কী করব? আমার পেনশনের টাকাটা পেতেও আরো অনেক দিন বাকি। এমন কত কথা চিন্তা করতে করতে, হেঁটেই চলছে ধীর গতিতে।
পথের মাঝে, তার পুরনো এক বন্ধুর সাথে হঠাৎ দেখা! তার বন্ধু তাকে ডাকল- আরে, জব্বার নাহ! তুই এখানে? কেমন আছিস, আর কোথায় যাচ্ছিস? জব্বার মিয়াও তাকে দেখে বেশ অবাক হলো! কিছুটা কৌতুহলী স্বরে উত্তর দিলো- আরে, সাজ্জাদ তুই? আমি তো বিশ্বাসেই করতে পারছি না! তা, হঠাৎ এই দিকে কোত্থেকে এলি? মামার বাড়িতে যাচ্ছি। আগে বল, তুই কেমন আছিস? সাজ্জাদের উত্তর- আলহামদুলিল্লাহ, আমি ভালো আছি। তোর কী খবর? এত দিন কোথায় ছিলি? আর তোর মুখখানা এমন মলিন কেন? সেই যে কবে তোকে দেখেছিলাম, ঠিক মনে নেই। একদিন তুই কথায় কথায় কী উচ্চস্বরে হেঁটে উঠতি! আজ কোথায় চলে গেল সেই হাসিটা! চেহারাটায় এমন মলিন দেখা যাচ্ছে কেন? জব্বার তুই কেন জানি আর আগের মতো নেই। খুব বদলে গেছিস, তোকে তো প্রথমে আমি চিন্তেই পারছিলাম না। হ্যাঁ, ঠিকই বলেছিস এখন আর নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার সময় আছে? সংসার জিঞ্জিরায় আবদ্ধ হয়ে জীবনের মর্মস্পর্শী ও বেদনাময় দিনগুলো অতিবাহিত করছি। জানি না, এ থেকে কবে মুক্তি পাব। আর ভালো লাগে না। সাজ্জাদ বলল- তোর ঘোরলাগা কথা কোথা না বসলে বুঝতে পারব না। আচ্ছা, সত্যি করে বল তো কী হয়েছে তোর? তারপর জব্বার বলল- সে অনেক কথা বন্ধু, চল কোথাও গিয়ে বসি, সাজ্জাদ বলল- হ্যাঁ, হ্যাঁ চল!
তারা দুই বন্ধু একটি চা-স্টলে গিয়ে বসল। জব্বার বলল- আচ্ছা তুই সেই যে সৌদি আরব গিয়েছিলি তা কত বছর পর এলি? সাজ্জাদের উত্তর- ১৫ বছর পর এলাম। কবে এলি? এই তো, দু’মাস হলো। সাজ্জাদ বলল- তোর কী অবস্থা, তোর ছেলমেয়েদের খবর কী? আমার একটা ছেলে ও একটা মেয়ে, তা চাকরিটা এখনো করছিস? না নারে বন্ধু এখন অবসরে চলে আসছি। তা সব মিলিয়ে কী অবস্থা? এই তো চলছে কোনোভাবে। এভাবে অনেক্ষণ কথা হলো তাদের মধ্যে। তারপর জব্বার একটু ইমোশনাল হয়ে পড়ে, আহারে! তোর সাথে আমি যোগাযোগ করার জন্য কত আপ্রাণ চেষ্টা করেছি রে, তা বলে বুঝানো সম্ভব নয়। খুব মিস করেছি তোকে, বিগত দিনগুলোতে কেউ ছিল না আমার পাশে দাঁড়ানোর মতো। সবাই সবার স্বার্থে ব্যস্ত ছিল প্রতিনিয়ত। যাই হোক, জব্বার কথা বলতে বলতে চায়ের অর্ডার করল, দোকানির কাছে। তারপর চা দিলো, তারা দুই বন্ধু চা খেতে, মিষ্টি খুনসুটিতে যেন অতীতের হারানো পুরনো দিনগুলোতে ফিরে গেল। সাজ্জাদ, আবেগাপ্লুত হয়ে বলল- আচ্ছা জব্বার, তোর কি মনে আছে? আমাদের সেই শৈশব ও কৈশোরের সুন্দর সোনালিচাঁপা দিনগুলোর কথা? কোথায় যেন হারিয়ে গেল, সেসব দিনগুলো, মনে হয়, এই তো সেদিন! ৪০ বছরও হয়নি। চায়ের দোকানে বসে নানাবিধ কথাবার্তা হলো দুই বন্ধুর মধ্যে, এবার ওঠার পালা। কে বিল দেবে, এই নিয়ে চলছে বিতর্ক- জব্বার বলল সে দেবে, সাজ্জাদ বলছে না জব্বার আমি দেবো, জব্বার বলল- না, না তুই আমাদের এলাকায় এসেছিস, আমি দেবো, তোদের ওখানে গেলে তুই দিস! তারপর জব্বারের এমন আগ্রহ দেখে, সাজ্জাদ সম্মতি পোষণ করল, বলল আচ্ছা দে। জব্বারের এবার মনে হলো যে তার পকেটে কোনো টাকা নেই। তার সারা শরীর ঘেমে যাচ্ছে, মনে মনে বলতে লাগল হায়, হায় লজ্জায় এবার আমার মাথাটা নিচু হয়ে যাবে, এতদিন পর বন্ধুর সাথে দেখা হলো আর সেই বিলটা যদি আমি দিতে না পারি। কী লজ্জা! কী লজ্জা! মনে মনে বলতে লাগল হে, আল্লাহ আমি এখন কি করি? আমাকে তুমি এই লজ্জার হাত থেকে রক্ষা করো। আমার বন্ধুর কাছে আমার সম্মানটা বাঁচাও। এরপর সাজ্জাদ জব্বারে মুখের দিকে তাকাল, আর বলল- কি রে বিল দিয়ে চল আমি আবার মামা বাড়িতে যাব, একটু তাড়াও আছে। আবার জব্বারের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। জব্বারের চোখ দু’টি টলমল করছে, সাজ্জাদ বিষয়টি লক্ষ করল কৌতূহলী দৃষ্টিতে, তারপর বলল- কী হয়েছে? মাথাটা একটু নিচু করে দিয়ে নীরব হয়ে রইল। তারপর মৃদু স্বরে বলল- আসলে কিভাবে বলি, আমার তো লজ্জা লাগছে! তোকে বিল দিতে মানা করে দিয়ে এখন তো দেখি আমার পকেটে টাকা নেই। তো বন্ধুরা আজ এই পর্যন্ত এখানেই খোদা হাফেজ।
আমাদের এই সমাজে তিন শ্রেণীর মানুষ আছে। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত। আর এই তিন শ্রেণীর মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে দুর্ভাগা ও অবজ্ঞার যে শ্রেণীটি তা হলো মধ্যবিত্ত, তারা কাউকে কিছু দিতে পারে না, আবার কারো কাছে চাইতেও পারে না, লোকলজ্জার ভয় আর সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে।
জব্বার মিঞা, রাস্তা দিয়ে একা একা হাঁটছে, আর চিন্তা করছে, আজ তার ছোট মেয়েটার স্কুলে ভর্তি ফির টাকা জমা দিতে হবে। কারো কাছে ধার চেয়ে তো পেলাম না। আমার পকেটে একটি টাকা পর্যন্ত নেই, মেয়ের ভর্তির টাকা কেমনে জোগাড় করব, আর কিভাবেই বা আজ বাজার সদাই করব? ওই দিকে স্ত্রী অপেক্ষা করছে, বাজার নিয়ে গেলে রান্না করবে, সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেবে। এক ছেলে, এক মেয়ে ও আমরা স্বামী-স্ত্রীসহ চারজনের সংসারে আমি একাই জোগানদাতা। সরকারি চাকরিটা যত দিন ছিল, তখন তো মোটামুটিভাবে চলতে পেরেছি, এখন কী করব? আমার পেনশনের টাকাটা পেতেও আরো অনেক দিন বাকি। এমন কত কথা চিন্তা করতে করতে, হেঁটেই চলছে ধীর গতিতে।
পথের মাঝে, তার পুরনো এক বন্ধুর সাথে হঠাৎ দেখা! তার বন্ধু তাকে ডাকল- আরে, জব্বার নাহ! তুই এখানে? কেমন আছিস, আর কোথায় যাচ্ছিস? জব্বার মিয়াও তাকে দেখে বেশ অবাক হলো! কিছুটা কৌতুহলী স্বরে উত্তর দিলো- আরে, সাজ্জাদ তুই? আমি তো বিশ্বাসেই করতে পারছি না! তা, হঠাৎ এই দিকে কোত্থেকে এলি? মামার বাড়িতে যাচ্ছি। আগে বল, তুই কেমন আছিস? সাজ্জাদের উত্তর- আলহামদুলিল্লাহ, আমি ভালো আছি। তোর কী খবর? এত দিন কোথায় ছিলি? আর তোর মুখখানা এমন মলিন কেন? সেই যে কবে তোকে দেখেছিলাম, ঠিক মনে নেই। একদিন তুই কথায় কথায় কী উচ্চস্বরে হেঁটে উঠতি! আজ কোথায় চলে গেল সেই হাসিটা! চেহারাটায় এমন মলিন দেখা যাচ্ছে কেন? জব্বার তুই কেন জানি আর আগের মতো নেই। খুব বদলে গেছিস, তোকে তো প্রথমে আমি চিন্তেই পারছিলাম না। হ্যাঁ, ঠিকই বলেছিস এখন আর নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার সময় আছে? সংসার জিঞ্জিরায় আবদ্ধ হয়ে জীবনের মর্মস্পর্শী ও বেদনাময় দিনগুলো অতিবাহিত করছি। জানি না, এ থেকে কবে মুক্তি পাব। আর ভালো লাগে না। সাজ্জাদ বলল- তোর ঘোরলাগা কথা কোথা না বসলে বুঝতে পারব না। আচ্ছা, সত্যি করে বল তো কী হয়েছে তোর? তারপর জব্বার বলল- সে অনেক কথা বন্ধু, চল কোথাও গিয়ে বসি, সাজ্জাদ বলল- হ্যাঁ, হ্যাঁ চল!
তারা দুই বন্ধু একটি চা-স্টলে গিয়ে বসল। জব্বার বলল- আচ্ছা তুই সেই যে সৌদি আরব গিয়েছিলি তা কত বছর পর এলি? সাজ্জাদের উত্তর- ১৫ বছর পর এলাম। কবে এলি? এই তো, দু’মাস হলো। সাজ্জাদ বলল- তোর কী অবস্থা, তোর ছেলমেয়েদের খবর কী? আমার একটা ছেলে ও একটা মেয়ে, তা চাকরিটা এখনো করছিস? না নারে বন্ধু এখন অবসরে চলে আসছি। তা সব মিলিয়ে কী অবস্থা? এই তো চলছে কোনোভাবে। এভাবে অনেক্ষণ কথা হলো তাদের মধ্যে। তারপর জব্বার একটু ইমোশনাল হয়ে পড়ে, আহারে! তোর সাথে আমি যোগাযোগ করার জন্য কত আপ্রাণ চেষ্টা করেছি রে, তা বলে বুঝানো সম্ভব নয়। খুব মিস করেছি তোকে, বিগত দিনগুলোতে কেউ ছিল না আমার পাশে দাঁড়ানোর মতো। সবাই সবার স্বার্থে ব্যস্ত ছিল প্রতিনিয়ত। যাই হোক, জব্বার কথা বলতে বলতে চায়ের অর্ডার করল, দোকানির কাছে। তারপর চা দিলো, তারা দুই বন্ধু চা খেতে, মিষ্টি খুনসুটিতে যেন অতীতের হারানো পুরনো দিনগুলোতে ফিরে গেল। সাজ্জাদ, আবেগাপ্লুত হয়ে বলল- আচ্ছা জব্বার, তোর কি মনে আছে? আমাদের সেই শৈশব ও কৈশোরের সুন্দর সোনালিচাঁপা দিনগুলোর কথা? কোথায় যেন হারিয়ে গেল, সেসব দিনগুলো, মনে হয়, এই তো সেদিন! ৪০ বছরও হয়নি। চায়ের দোকানে বসে নানাবিধ কথাবার্তা হলো দুই বন্ধুর মধ্যে, এবার ওঠার পালা। কে বিল দেবে, এই নিয়ে চলছে বিতর্ক- জব্বার বলল সে দেবে, সাজ্জাদ বলছে না জব্বার আমি দেবো, জব্বার বলল- না, না তুই আমাদের এলাকায় এসেছিস, আমি দেবো, তোদের ওখানে গেলে তুই দিস! তারপর জব্বারের এমন আগ্রহ দেখে, সাজ্জাদ সম্মতি পোষণ করল, বলল আচ্ছা দে। জব্বারের এবার মনে হলো যে তার পকেটে কোনো টাকা নেই। তার সারা শরীর ঘেমে যাচ্ছে, মনে মনে বলতে লাগল হায়, হায় লজ্জায় এবার আমার মাথাটা নিচু হয়ে যাবে, এতদিন পর বন্ধুর সাথে দেখা হলো আর সেই বিলটা যদি আমি দিতে না পারি। কী লজ্জা! কী লজ্জা! মনে মনে বলতে লাগল হে, আল্লাহ আমি এখন কি করি? আমাকে তুমি এই লজ্জার হাত থেকে রক্ষা করো। আমার বন্ধুর কাছে আমার সম্মানটা বাঁচাও। এরপর সাজ্জাদ জব্বারে মুখের দিকে তাকাল, আর বলল- কি রে বিল দিয়ে চল আমি আবার মামা বাড়িতে যাব, একটু তাড়াও আছে। আবার জব্বারের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। জব্বারের চোখ দু’টি টলমল করছে, সাজ্জাদ বিষয়টি লক্ষ করল কৌতূহলী দৃষ্টিতে, তারপর বলল- কী হয়েছে? মাথাটা একটু নিচু করে দিয়ে নীরব হয়ে রইল। তারপর মৃদু স্বরে বলল- আসলে কিভাবে বলি, আমার তো লজ্জা লাগছে! তোকে বিল দিতে মানা করে দিয়ে এখন তো দেখি আমার পকেটে টাকা নেই। আমাদের এই সমাজে তিন শ্রেণীর মানুষ আছে। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত। আর এই তিন শ্রেণীর মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে দুর্ভাগা ও অবজ্ঞার যে শ্রেণীটি তা হলো মধ্যবিত্ত, তারা কাউকে কিছু দিতে পারে না, আবার কারো কাছে চাইতেও পারে না, লোকলজ্জার ভয় আর সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে।
জব্বার মিঞা, রাস্তা দিয়ে একা একা হাঁটছে, আর চিন্তা করছে, আজ তার ছোট মেয়েটার স্কুলে ভর্তি ফির টাকা জমা দিতে হবে। কারো কাছে ধার চেয়ে তো পেলাম না। আমার পকেটে একটি টাকা পর্যন্ত নেই, মেয়ের ভর্তির টাকা কেমনে জোগাড় করব, আর কিভাবেই বা আজ বাজার সদাই করব? ওই দিকে স্ত্রী অপেক্ষা করছে, বাজার নিয়ে গেলে রান্না করবে, সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেবে। এক ছেলে, এক মেয়ে ও আমরা স্বামী-স্ত্রীসহ চারজনের সংসারে আমি একাই জোগানদাতা। সরকারি চাকরিটা যত দিন ছিল, তখন তো মোটামুটিভাবে চলতে পেরেছি, এখন কী করব? আমার পেনশনের টাকাটা পেতেও আরো অনেক দিন বাকি। এমন কত কথা চিন্তা করতে করতে, হেঁটেই চলছে ধীর গতিতে।
পথের মাঝে, তার পুরনো এক বন্ধুর সাথে হঠাৎ দেখা! তার বন্ধু তাকে ডাকল- আরে, জব্বার নাহ! তুই এখানে? কেমন আছিস, আর কোথায় যাচ্ছিস? জব্বার মিয়াও তাকে দেখে বেশ অবাক হলো! কিছুটা কৌতুহলী স্বরে উত্তর দিলো- আরে, সাজ্জাদ তুই? আমি তো বিশ্বাসেই করতে পারছি না! তা, হঠাৎ এই দিকে কোত্থেকে এলি? মামার বাড়িতে যাচ্ছি। আগে বল, তুই কেমন আছিস? সাজ্জাদের উত্তর- আলহামদুলিল্লাহ, আমি ভালো আছি। তোর কী খবর? এত দিন কোথায় ছিলি? আর তোর মুখখানা এমন মলিন কেন? সেই যে কবে তোকে দেখেছিলাম, ঠিক মনে নেই। একদিন তুই কথায় কথায় কী উচ্চস্বরে হেঁটে উঠতি! আজ কোথায় চলে গেল সেই হাসিটা! চেহারাটায় এমন মলিন দেখা যাচ্ছে কেন? জব্বার তুই কেন জানি আর আগের মতো নেই। খুব বদলে গেছিস, তোকে তো প্রথমে আমি চিন্তেই পারছিলাম না। হ্যাঁ, ঠিকই বলেছিস এখন আর নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার সময় আছে? সংসার জিঞ্জিরায় আবদ্ধ হয়ে জীবনের মর্মস্পর্শী ও বেদনাময় দিনগুলো অতিবাহিত করছি। জানি না, এ থেকে কবে মুক্তি পাব। আর ভালো লাগে না। সাজ্জাদ বলল- তোর ঘোরলাগা কথা কোথা না বসলে বুঝতে পারব না। আচ্ছা, সত্যি করে বল তো কী হয়েছে তোর? তারপর জব্বার বলল- সে অনেক কথা বন্ধু, চল কোথাও গিয়ে বসি, সাজ্জাদ বলল- হ্যাঁ, হ্যাঁ চল!
তারা দুই বন্ধু একটি চা-স্টলে গিয়ে বসল। জব্বার বলল- আচ্ছা তুই সেই যে সৌদি আরব গিয়েছিলি তা কত বছর পর এলি? সাজ্জাদের উত্তর- ১৫ বছর পর এলাম। কবে এলি? এই তো, দু’মাস হলো। সাজ্জাদ বলল- তোর কী অবস্থা, তোর ছেলমেয়েদের খবর কী? আমার একটা ছেলে ও একটা মেয়ে, তা চাকরিটা এখনো করছিস? না নারে বন্ধু এখন অবসরে চলে আসছি। তা সব মিলিয়ে কী অবস্থা? এই তো চলছে কোনোভাবে। এভাবে অনেক্ষণ কথা হলো তাদের মধ্যে। তারপর জব্বার একটু ইমোশনাল হয়ে পড়ে, আহারে! তোর সাথে আমি যোগাযোগ করার জন্য কত আপ্রাণ চেষ্টা করেছি রে, তা বলে বুঝানো সম্ভব নয়। খুব মিস করেছি তোকে, বিগত দিনগুলোতে কেউ ছিল না আমার পাশে দাঁড়ানোর মতো। সবাই সবার স্বার্থে ব্যস্ত ছিল প্রতিনিয়ত। যাই হোক, জব্বার কথা বলতে বলতে চায়ের অর্ডার করল, দোকানির কাছে। তারপর চা দিলো, তারা দুই বন্ধু চা খেতে, মিষ্টি খুনসুটিতে যেন অতীতের হারানো পুরনো দিনগুলোতে ফিরে গেল। সাজ্জাদ, আবেগাপ্লুত হয়ে বলল- আচ্ছা জব্বার, তোর কি মনে আছে? আমাদের সেই শৈশব ও কৈশোরের সুন্দর সোনালিচাঁপা দিনগুলোর কথা? কোথায় যেন হারিয়ে গেল, সেসব দিনগুলো, মনে হয়, এই তো সেদিন! ৪০ বছরও হয়নি। চায়ের দোকানে বসে নানাবিধ কথাবার্তা হলো দুই বন্ধুর মধ্যে, এবার ওঠার পালা। কে বিল দেবে, এই নিয়ে চলছে বিতর্ক- জব্বার বলল সে দেবে, সাজ্জাদ বলছে না জব্বার আমি দেবো, জব্বার বলল- না, না তুই আমাদের এলাকায় এসেছিস, আমি দেবো, তোদের ওখানে গেলে তুই দিস! তারপর জব্বারের এমন আগ্রহ দেখে, সাজ্জাদ সম্মতি পোষণ করল, বলল আচ্ছা দে। জব্বারের এবার মনে হলো যে তার পকেটে কোনো টাকা নেই। তার সারা শরীর ঘেমে যাচ্ছে, মনে মনে বলতে লাগল হায়, হায় লজ্জায় এবার আমার মাথাটা নিচু হয়ে যাবে, এতদিন পর বন্ধুর সাথে দেখা হলো আর সেই বিলটা যদি আমি দিতে না পারি। কী লজ্জা! কী লজ্জা! মনে মনে বলতে লাগল হে, আল্লাহ আমি এখন কি করি? আমাকে তুমি এই লজ্জার হাত থেকে রক্ষা করো। আমার বন্ধুর কাছে আমার সম্মানটা বাঁচাও। এরপর সাজ্জাদ জব্বারে মুখের দিকে তাকাল, আর বলল- কি রে বিল দিয়ে চল আমি আবার মামা বাড়িতে যাব, একটু তাড়াও আছে। আবার জব্বারের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। জব্বারের চোখ দু’টি টলমল করছে, সাজ্জাদ বিষয়টি লক্ষ করল কৌতূহলী দৃষ্টিতে, তারপর বলল- কী হয়েছে? মাথাটা একটু নিচু করে দিয়ে নীরব হয়ে রইল। তারপর মৃদু স্বরে বলল- আসলে কিভাবে বলি, আমার তো লজ্জা লাগছে! তোকে বিল দিতে মানা করে দিয়ে এখন তো দেখি আমার পকেটে টাকা নেই।
You must be logged in to post a comment.