কিডনী রোগীদের কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত নয়?

  Generate Earning Link

বাংলাদেশে কিডনি একটি ভয়াবহ রোগ। এর ব্যাপকতাও বেশি। দেশে প্রায় দুই কোটিরও অধিক লোক কোন না কোনভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত। সামনেই ঈদ। তাই এ সময় রোগিদের খাবার গ্রহণ করতে হবে সতর্কবাবে।

ঘণ্টায় ৫ জন অকাল মৃত্যুবরণ করেন কিডনি বিকল হয়ে। কিডনি বিকল হয়ে গেলে তার চিকিৎসা ব্যয় এত বেশি যে, এদেশের শতকরা ৫ ভাগ লোকও এই দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারে না।

কিন্তু রোগের প্রাদুর্ভাব অত্যন্ত ব্যাপক, কিডনি রোগ ভয়াবহ একটু সচেতন হলেই এ রোগ প্রতিরোধ যোগ্য।
অনেক কারণে কিডনি বিকল হয়। তবে এরমধ্যে অন্যতম কারণ হলো ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনির ছাকনির প্রদাহ অন্যতম।

এ ছাড়া বংশগত কারণ। জন্মগত সমস্য, কিডনিতে পাথর, মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ, প্রস্রাব প্রবাহে বাধা, ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া , অতিরিক্ত ওজন, ধূমপান, মদপান এসব কারণে কিডণি বিকল হয়ে থাকে।

যে কোন কারণেই হোক, কিডনি বিকল শুরু হওয়ার পর থেকে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ধরে কিডনির কার্যকারিতা ক্ষয় হতে থাকে। এভাবে তীব্রতা অনুসারে কিডনি বিকল বা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগকে ৫টি ধাপে ভাগ করা হয়।

এক থেকে চার নম্বর ধাপ পর্যন্ত যদি এই রোগ শনাক্ত করা যায় তবে চিকিৎসা করে অনেক ক্ষেত্রে নিরাময় করা যায় অথবা কিডনি বিকল বিলম্ব করা যায়। আর ৫ নম্বর ধাপে পৌঁছে গেলে বেঁচে থাকার জন্য ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি সংযোজন অপরিহার্য হয়ে পড়ে।

কিডনি বিকল প্রতিরোধের জন্য ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা, রক্ত শুন্যতা চিকিৎসার জন্য রক্তে বিভিন্ন লবন ও উপাদানের সমতা রক্ষা, শরীরে পানির পরিমান নিয়ন্ত্রণ ও বিন্যাস কিডনি বিকল ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সুঠাম স্বাস্থ্যের জন্য খাদ্যের ৫টি উপাদান অপরিহার্য। এগুলো হলো- আমিষ, শর্করা, স্নেহ জাতীয় খাবার, ফল-শাক-সবজী ও দুগ্ধজাত খাবার। প্রতিদিনের খাদ্যে এগুলো সমভাবে থাকতে হবে। তবে কিডনি রোগিদের ক্ষেত্রে এর কিছু ব্যতিক্রম ঘটবে।

আমিষ জাতীয় খাবার
আমাদের শরীরের কাঠামো তৈরি হয় আমিষ দিয়ে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ এগুলোতে প্রথম শ্রেণির আমিষ থাকে। আবার ডাল ও বিভিন্ন শাক-সবজিতেও আমিষ থাকে যা অসম্পূর্ণ বা তৃতীয় শ্রেণির আমিষ।

দেহে ক্রিয়া-বিক্রিয়ার ফলে আমিষ ভেঙ্গে নাইট্রোজেন, ইউরিয়া, ক্রিয়েটিন ইত্যাদি তৈরি হয়। সুস্থ অবস্থায় কিডনির মাধ্যমে এগুলো প্রস্রাবের সঙ্গে নির্গত হয়ে আমাদের বিষমুক্ত রাখে।

কিন্তু কিডনি বিকল হয়ে গেলে এগুলো রক্তে জমে অসুস্থ করে তোলে। তাছাড়া অতিরিক্ত আমিষ রক্তে থাকলে তা কিডনির ছাকনির ক্ষতি করে। সেই জন্য দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগিদের আমিষ জাতীয় খাবার কম খেতে হবে।

ওজন অনুসারে ১০০ থেকে ১৬০ গ্রাম পর্যন্ত মাংস বা মাছ একদিনে খেতে পারবে। গরু, খাসী বা মহিষের মাংস ও খেতে পারবে তবে তা যেন চর্বিযুক্ত না হয়। মাংস পানিতে ফুটিয়ে চর্বিমুক্ত করে খেতে পারে।

অনেকে এমন রোগি আছেন যারা মাংস খাওয়া একেবারে বন্ধ করে দেন- এতে নিজ শরীরের মাংস ক্ষয় প্রাপ্ত হবে। গঠনের ক্ষতি হবে ও শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে পরিমিত পরিমাণ প্রথম শ্রেণির আমিষ সবাইকে খেতে হবে।

ক্যালরি
আমাদের কার্যক্ষমতার জন্য জ্বালানী প্রয়োজন। এটাই ক্যালরি । আমরা বেশীরভাগ ক্যালরি পাই শর্করা থেকে। ভাত, আলু, সুজি, গম, ভূট্টা ক্যালরির মূল উৎস।

কিডনি রোগিদের যেহেতু ক্ষুধা মন্দা থাকে- অনেকের ওজন কমে যেতে পারে। যাদের ওজন কম তারা প্রচুর পরিমানে এগুলো খেতে পারবে। তবে আলুতে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে এক্ষেত্রে একটু সতর্ক থাকতে হবে। ঈদে পায়েশ , সেমাই, পুডিং, হালুয়া খেতে কোন বাধা নেই ।

স্নেহ জাতীয় খাবার
স্নেহ জাতীয় খাবারে প্রচুর ক্যালরি থাকে। প্রানিজ স্নেহ জাতীয় খাবার- যেমন গরু, খাসীর চর্বি, ডিমের কুসুম, দুধের সর এগুলোতে খারাপ লিপিড থাকে যা রক্তনালীতে বাসাবেঁধে হৃদরোগ, ব্রেন স্ট্রোক বা কিডনি রোগ করে থাকে।

এগুলো পরিহার করতে হবে। সয়াবিন তেল, অলিভ অয়েল, সানফ্লাওয়ার, সরিষার তেল পর্যাপ্ত খাওয়া যাবে। কোরবানির পশুর চর্বিযুক্ত মাংস পরিহার করতে হবে।

ফল, শাক-সবজি, সালাদ এগুলো খাবারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা আমরা প্রায়ই অবহেলা করি। ঈদের সময় ফল দিয়ে উপাদেয় কাষ্টার্ড তৈরি করা হয়। সালাদ ছাড়া টেবিল সাজানো অসম্পূর্ণ।

কিডনি বিকল রোগিরা এগুলো খেতে পারবে কি? হ্যাঁ পারবে। তবে একটু সাবধানে। যারা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের তৃতীয়, চতুর্থ ও প্রথম ধাপে আছেন- তাদের রক্তের পটাশিয়াম বেড়ে যাবার প্রবণতা থাকে।

এদের মাঝে মাঝে রক্তের উপাদান পরীক্ষা করে দেখে নিতে হয়। যদি পটাশিয়াম স্বাভাবিক থাকে এ উপাদেয় খাবার উপভোগ করুন।

আর একটি টিপস আছে। পটাশিয়াম যুক্ত ফল, সালাদ, সবজি খাবারের পরে পটাশিয়াম মুক্ত পাউডার খেলে অতিরিক্ত পটাশিয়াম মলের সঙ্গে বের হয়ে যাবে।

যারা নিয়মিত ডায়ালাইসিসে আছেন- যাদের কিডনি সম্পূর্ণ বিকল হয়ে গেছে তাদের সাধারণতঃ সপ্তাহে ২-৩ দিন ডায়ালাইসিস করতে হয়। ডায়ালাইসিসের সময় কিছু রক্ত ও আমিষ চলে যায়।

তাই এই রোগিদের সাধারণ মানুষের তুলনায় আরো বেশি পরিমানে মাছ-মাংস, ডিম, দুধ খেতে হয়। এরা কোরবানীর সব মাংসই খেতে পারবেন শুধু চর্বি পরিহার করবেন। শরীরে অতিরিক্ত পানি যাতে না জমে সেজন্য খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখবেন। বাজারের পানীয় খাবেন না।

লেখক: কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ, চিফ কনসালটেন্ট ও কিডনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান- ল্যাবএইড হাসপাতাল ও ক্যাম্পস-এর সভাপতি, (এমবিবিএস এমডি, এফসিপিএস, এফআরসিপি)।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
About Author
Recent Articles
Jul 6, 2024, 8:06 PM affan qureshi
Jul 6, 2024, 12:36 PM affan qureshi
Jul 3, 2024, 1:19 PM affan qureshi
May 1, 2023, 1:50 AM মোহাম্মদ রিদুয়ান