উত্তর ১
জিনসেং
এটি মাংসল মূলবিশিষ্ট এক ধরনের বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এটি উত্তর গোলার্ধে পূর্ব এশিয়াতে, বিশেষ করে চীন, কোরিয়া ও পূর্ব সাইবেরিয়াতে, ঠাণ্ডা পরিবেশে জন্মে। শক্তিবর্ধক টনিক হিসেবে বিভিন্ন দেশে জিনসেংয়ের প্রচলন আছে। জিনসেং শব্দটা উচ্চারণের সাথে যে দেশটির নাম উচ্চারিত হয় সেটি হলো কোরিয়া। জিনসেংকে অনেকে কোরিয়ান ভায়াগ্রা বলে থাকে। জিনসেং হলো গাছের মূল। হাজার হাজার বছর ধরে কোরিয়াতে জিনসেং ওষুধি গুণাগুণের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। জিনসেং গাছের মূল রোগ প্রতিরোধক এবং ইংরেজিতে বললে বলতে হয় Proactive tool in warding off disease। জিনসেংকে কোরিয়ানরা বিভিন্নভাবে খেয়ে থাকে। এর পুরো মূল সুপে দিয়ে দেয়, সিদ্ধ মূল খেতে হয়। চিবিয়ে চিবিয়ে এর নির্যাস নিতে হয়। এছাড়াও জিনসেং-এর রয়েছে নানাবিধ খাদ্য উপকরণ।
জিনসেং কে বলা হয় wonder herbs বা আশ্চর্য লতা। চীনে সহস্র বছর ধরে জিনসেং গাছের মূল আশ্চর্য রকম শক্তি উতপাদনকারী পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এছাড়াও এর রয়েছে নানাবিধ গুন। চীন থেকে কেউ বেড়াতে আসলে সাধারণত দেখা যায় জিনসেং ও সবুজ চা কে গিফট হিসেবে নিয়ে আসতে।
জিনসেং: মুলত দুই ধরণের জিনসেং ঔষধি গুনসম্পন্ন হিসেবে পরিচিত- আমেরিকান ও এশিয়ান। এর মধ্যে এশিয়ান জিনসেং অপেক্ষাকৃত বেশি কার্যকরী। এই দুই ধরণের জিনসেং কে বলা হয় প্যানাক্স জিনসেং। প্যানাক্স শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ “panacea” থেকে যার অর্থ হলো “All healer” বা সর্ব রোগের ঔষধ। জিনসেং সাদা (খোসা ছাড়ানো) ও লাল (খোসা সমেত) এই দুই রকম রূপে পাওয়া যায়। খোসা সমেত অবস্থায় এটি অধিক কার্যকরী। এদের মধ্যে থাকা জিনসেনোনোসাইড নামক একটি উপাদান এর কার্যক্ষমতার জন্য দায়ী।
উপকারিতাঃ
➤পিরিয়ডস বাঁ মসিকের সময় কালে
মহিলাদের পিরিয়ডসের সময় অনেক রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই অসুবিধা গুলি জিনসেং এর সাহায্যে কম করা যায়। যেমন এই সময় হওয়া ফোলা বা খিচুনি গুলি জিনসেং কম করে।এটি মুডও পরিবর্তন করে।
➤কগনিটিভ ক্ষমতা বাড়ায়
কগনিটিভ ক্ষমতা যেমন একাগ্রতা, স্মৃতি ইত্যাদি বাড়াতে জিনসেং এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও এটি নিয়মিত সেবন করলে আপনার স্নায়বিক গতিবিধি বাড়তে পারে। জিনসেং এ থাকা থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের পট্টিকা এবং ফ্রি রেডিকল্স এর উৎপন্ন হওয়া কম করে। এর দ্বারা অনেক রকম কগনিটিভ এর ক্ষতি দূর হয়।
➤ক্যানসারের চিকিৎসা
কোলোন ক্যানসার এর সম্ভাবনা কম করতে ইহার ভূমিকা অনেক গবেষণার দ্বারা প্রমাণিত। জিনসেং এর নিয়মিত সেবন কোলোন ক্যানসারের ছড়িয়ে পড়তে আটকাতে পারে।জিনসেং এর উপর করা প্রারম্ভিক গবেষণা এর অ্যান্টি টিউমার গুণের কথা বলেছে।
➤জিনসেং এর সাহায্যে সুগারের চিকিৎসা
আজকালকার দিনে সুগার থেকে বাঁচতে বা কম করতে অনেক রকম পদ্ধতি আছে। এইসব পদ্ধতির মধ্যে জিনসেং কে সব থেকে ভালো আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে বিচার করা হয়। এর জন্য জিনসেং এর ব্যবহার খালি পেটে অথবা খাবার পরে করতে পারেন। এর ফলে রক্ত শর্করা স্তরকে উল্লেখযোগ্য ভাবে কমানো যেতে পারে।
➤মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি
জিনসেং বিপাকে উত্তেজিত করে এবং উর্জার স্তর বাড়িয়ে স্নায়তন্ত্রকে প্রভাবিত করে। এর ফলে মানসিক অবসাদ যেমন চিন্তা এবং চাপ কম হয়। এছাড়াও জিনসেং এর মধ্যে এটা এডাস্টোজেন নামে এক উপাদান থাকে যা হরমোনাল স্তর বদলানোর ক্ষমতা রাখে। এর ফলে চাপও কম হয় এবং মুড ভালো হয়।
➤বয়স বাড়া থামিয়ে দেয়
জিনসেং এ প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যার ফলে পুরো শরীরে ফ্রি রেডিক্যালস এর ঋণাত্মক প্রভাব কম হয়। আপনাকে জানিয়ে দিই যে ফ্রি রেডিক্যালস হল সেলুলার বিপাকের ফলে তৈরি একটি ক্ষতিকর উপ পণ্য। ইহা সতেজ কোষগুলোর ক্ষতি করে।
➤উন্নয়নক্ষম দোষ এর চিকিৎসা
চৈনিক আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাতে এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে জিনসেং ব্যবহার করা হয়। এর কারণ হলো একটি প্রভাবশালী কামোদ্দীপক। কোরিয়ার লাল জিনসেং এই কাজগুলো জন্য ব্যবহার করা হয়।
➤ওজন কম করতে
জিনসেং এ অনেক রকম রাসায়নিক উপাদান থাকে যা খাবার ইচ্ছাকে আটকে রাখে। বিশেষ করে শুকনো জিনসেং পাউডার কোনরকম খাবারের লোভ কে ট্রিগার করে খিদে পাওয়ার হরমোনকে আটকে রাখে। যার ফলে আপনার ওজন কম করতে এটি সাহায্য করে।
➤ত্বকের দেখাশোনা
আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চার কে জিনসেং উত্তেজিত করে। বিশেষ করে ত্বকের কোষগুলোতে এর বেশি প্রভাব দেখা যায়। এতে বিপাকে উত্তেজিত এবং সক্রিয় করার ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট পাওয়া যায়। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। জিনসেং এর চা আপনার ত্বককে টোন্ড এবং হাইড্রেট করে। ইহা অক্সিজেনের ঘাটতিকে পূর্ণ করে ত্বকের কোষ গুলিকে পুনর্জীবিত করে।
➤চুলের জন্য
চুলের বিভিন্ন সমস্যা যেমনচুল পড়ে যাওয়া এবং টাক ইত্যাদিতে জিনসেং অনেক উপকারী। কারণ জিনসেং এ অনেক প্রাকৃতিক কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে জিনসেং চুলের দেখাশোনার জন্য অনেক প্রভাবশালী।
উপরের উপকারিতা সংক্ষেপে বলতে গেলে –
১। শারিরিক শক্তি বাড়ায় এবং দুশ্চিন্তা ও হতাশা দূর করে।
২। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৩। পুরুষের লিংগোত্থানে অক্ষমতা রোধ করে।
৪। পুরুষদের দ্রুত বীর্যস্খলন রোধ করে।
৫। বিভিন্ন মানসিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যেমন মনযোগ, স্মৃতিশক্তি, কথা শোনার সাথে সাথে বুঝতে পারার ক্ষমতা,কল্পনাশক্তি, শেখার ক্ষমতা, বিচারবুদ্ধি, চিন্তা শক্তি ও সমস্যা সমাধান করে কোন একটা সিদ্ধান্তে পৌছানোর ক্ষমতা।
৬। কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।
৭। জিনসেং বিভিন্ন এন্টি-এজিং ক্রীম ও স্ট্রেচ মার্ক ক্রীম এ ব্যবহৃত হয়। এইসব ক্রীম ত্বকের বলিরেখা প্রতিরোধ করে।
৮। মেয়েলি হরমোন বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বৃদ্ধি ও শক্তি বর্ধক হিসেবে জিনসেং দারুন কার্যকরী।
জিনসেং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
জিনসেং এর সবচেয়ে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিকৃয়া হলো ঘুমের সমস্যা। আগেই বলেছি, জিনসেং স্নায়ুতন্ত্র কে উত্তেজিত করে ও মানসিক ক্ষমতা বাড়ায়। উত্তেজিত স্নায়ুর কারণে ঘুম আসতে দেরি হয়, যেমন টা হয় কফি খাওয়ার পরে। অন্যান্য সাধারণ সমস্যার মধ্যে আছে ডায়রিয়া, মাথাব্যথা, হার্ট বিট বাড়া এবং ব্লাড প্রেশারে তারতম্য হওয়া (সাময়িক)।
জিনসেং এর অত্যন্ত পরিমাণে সেবন আপনার মাথা ব্যথা, অনিদ্রা এবং পেটে সমস্যা এর মত অসুবিধা দিতে পারে।
শক্তিশালী ভেষজ তাই এটি শরীরে অনেক ঋণাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
এর সেবন কোন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করলে বেশি ভালো হয়
জিংসেন মানুষের cognitive function বা মানসিক ক্ষমতা যেমন মনযোগ, স্মৃতিশক্তি, কথা শোনার সাথে সাথে বুঝতে পারার ক্ষমতা,কল্পনাশক্তি, শেখার ক্ষমতা, বিচারবুদ্ধি, চিন্তা শক্তি ও সমস্যা সমাধান করে কোন একটা সিদ্ধান্তে পৌছানোর ক্ষমতা অথবা সোজা ভাষায় বলতে গেলে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি্র উন্নয়নে জিনসেং স্নায়ুতন্তের উপর সরাসরি কাজ করে এর ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটা দেশের যেকোন বড় ফার্মেসীতে পাওয়া যায় তবে সঠিক জিনসেং পাওয়া দুষ্কর। জিনসেং এর সবচেয়ে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিকৃয়া হলো ঘুমের সমস্যা। জিনসেং স্নায়ুতন্ত্র কে উত্তেজিত করে ও মানসিক ক্ষমতা বাড়ায়। উত্তেজিত স্নায়ুর কারণে ঘুম আসতে দেরি হয়, যেমন টা হয় কফি খাওয়ার পরে। অন্যান্য সাধারণ সমস্যার মধ্যে আছে ডায়রিয়া, মাথাব্যথা, হার্ট বিট বাড়া এবং ব্লাড প্রেশারে তারতম্য হওয়া। বাচ্চা, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের এটা খেতে নিষেধ করা হয়। জিনসেং স্নায়ুতন্ত্রের উপর কাজ করে তাই স্নায়ুর উপর কাজ করে এমন অন্য কোন ওষুধ (যেমন ঘুমের অষুধ, বিষন্নতার ওষুধ ইতাদি) এর সঙ্গে এটা খাওয়া উচিত না, নয়ত স্নায়ু অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে যাবে। জিনসেং রক্ত জমাট বাধা প্রতিরোধ করে, তাই হার্টের রোগীরা যারা ইতমধ্যে রক্ত তরল করার অন্যান্য ওষুধ ( যেমন heparin and warfarin) খাচ্ছেন, তারা এদের সঙ্গে জিনসেং খাবেননা। জিনসেং সিরাফ ও ট্যাবলেট এক সাথে খেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি হবে।সোজা ভাষায় বলতে গেলে, জিনসেং এর ভালো গুনগুলোর কারণেই আসলে একে সতর্ক ভাবে গ্রহণ করা উচিত (যদিও উপরের আশংকা গুলো কোনটাই বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত না)।
সূত্রঃ ইন্টারনেট
You must be logged in to post a comment.