আহারজনিত মানসিক সমস্যা
ইদানিং আমাদের দেশের তরুন প্রজন্ম বিশেষতঃ তরুনীদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সম্পর্কে মাত্রাতিরিক্ত
সচেতনতা দেখা যায়। কেউ কেউ আকর্ষণীয় শারীরিক গড়নের কথা চিন্তা করে অতিরিক্ত ডায়েটিং
বা কম পরিমাণে খাবার গ্রহন করছে। ফলে পরিমিত খাদ্যের অভাবে খুব সহজেই রোগাক্রান্ত হয়ে
পড়ছে। অর্থাৎ হিতে বিপরীত হচ্ছে। তারা মূলতঃ ইটিং ডিসঅর্ডার বা আহারজনিত সমস্যায়
আক্রান্ত হচ্ছে। অতিরিক্ত ডায়েটিং এর ফলে অচিরেই বিভিন্ন শারিরীক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। নানা
কারণে আমাদের শরীর অসুস্থ হয়। এগুলোর মধ্যে খাবার সংক্রান্ত কারণটি অন্যতম।
আমরা ইচ্ছেকৃতভাবে খাবারে নানা রকম অনিয়ম করে থাকি। কখনো অনিয়মিত খেয়ে, কখনো
অপরিমিত খেয়ে বা পরিমাণের চেয়ে বেশি খেয়ে শরীরে বিভিন্ন রকমের সমস্যার সৃষ্টি করি। এই
কম খাওয়া বা বেশি খাওয়ার নানা কারণ আছে। যেমনঃ অনেকে ছিপছিপে শারীরিক গড়নের জন্য
প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম খেয়ে থাকে এবং শরীরের ওজন মারাত্মকভাবে কমে যায়। অনেকে
পরিমিত খেতে চায় কিন্তু রুচির অভাবে খেতে পারে না। আবার কেউ খাবার ইচ্ছেটাকে দমিয়ে
রাখতে না পেরে বেশি বেশি খেয়ে ফেলে। আর পরক্ষনেই মোটা হয়ে যাওয়ার ভয়ে বমি করে ফেলে
দেয়। এই সমস্যাগুলোকে ইটিং ডিসঅর্ডার বা আহারজনিত মানসিক সমস্যা হিসেবে গণ্য করা হয়।
আহারজনিত মানসিক সমস্যা দুই ধরনের হতে পারেঃ
১. অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসা
২. বুলিমিয়া নারভোসা
১. অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসাঃ এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের শারীরিক সৌন্দর্য
নিয়ে মারাত্বকভাবে সচেতন থাকে। মোটা হয়ে যাওয়ার ফলে শারীরিক সৌন্দর্য হারিয়ে যাওয়ার
আতঙ্কে থাকেন সর্বদা। তাই প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম খেয়ে থাকেন। এটা পুরোপুরি মানসিক
সমস্যা। যেসব তরুণী গ্লামার নিয়ে বেশি চিন্তিত বা যারা মডেলিং অভিনয়ের সাথে জড়িত তারাই
এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। প্রয়াত বৃটিশ রাজকুমারী ডায়ানা দীর্ঘদিন এ রোগে ভূগেছেন। শরীরের
চাহিদা অনুযায়ী খাবার তারা গ্রহন করে না। অনেক সময় সবজি বা সালাদ একবেলা খেয়ে সারাদিন
কাটিয়ে দেয়। দিনের পর দিন কিংবা মাসের পর মাস আমিষ স্পর্শ করে না। এর ফলে তারা
মারাত্মক পুষ্টিহীনতায় ভোগে। অনেক সময় খাবার খেয়ে ব্যায়াম করে বা তাড়াতাড়ি হজমের
উদ্দেশ্যে অস্থিরভাবে হাঁটাহাটি করে। ৫-১০% কিশোরী বা তরুণী যাদের বয়স ১৩-২০ বছরের
মধ্যে তারা এ রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়।
তাদের খাদ্যনালী ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায় এবং তখন তারা ইচ্ছে করলেও খেতে পারে না। জোর করে খেলে উগলে বের হয়ে আসতে চায় বা বমি
করে ফেলে। এছাড়াও অন্যান্য উপসর্গ যেমনঃ রক্তশুন্যতা, কোষ্ঠ কাঠিন্য, প্রস্রাবের জ্বালা পোড়া, ঘুমের সমস্যা, নিম্ন রক্তচাপ, শারীরিক দূর্বলতা এ
সমস্ত রোগীদের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায়। অনেক সময় শারীরিক জটিলতা থেকে অনিয়মিত মাসিক হয়। বড় ধরনের শারীরিক রোগে রোগীর মৃত্যুও
হতে পারে।
২. বুলিমিয়া নারভোসাঃ এটি আহারজনিত মানসিক সমস্যার আরেকটি ধরন। আক্রান্ত ব্যক্তি স্বল্প সময়ে অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রচুর খাবার
খেয়ে ফেলে । খাওয়ার পর অশান্তিতে ভূগে এবং অধিক মোটা হওয়ার ভয়ে যে কোন উপায়ে চেষ্টা করে বমি করে। মাঝে মাঝে দেখা যায় এরা কোষ্ঠ
কাঠিন্য বিরোধী ঔষুধ সেবন করে শরীরের ক্যালরীর মাত্র কমবার জন্য। এসমস্ত কারণে দেখা যায় শরীরের ওজন উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে যায়।
তারা ধীরে ধীরে অন্যান্য শারীরিক রোগে আক্রান্ত হয়। যারা খাবার দেখলে লোভ সংবরণ করতে পারে না আবার বেশি খেয়ে মেদ বাড়াতে চায় না।
তারাই প্রচুর খাবার পর ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে এবং এর ফলে তার মানসিক অশান্তি লাঘব হয়। এ ধরনের সমস্যাকেই বুলিমিয়া নারভাসা বলে।
বিশ্বের সুপারষ্টার ও মডেল কন্যারা এ রোগে আক্রান্ত হয়। তাদের খাওয়ার রুচি প্রচুর থাকে তাই না খেয়ে থাকতে পারে না। তৃপ্তি সহকারে খাওয়ার
পর বেশিক্ষন তা পেটে রাখতে চায় না। বমি করে ফেলে দেয়। মোটা হয়ে যাওয়ার ভয়ে ধীরে ধীরে এ প্রক্রিয়ায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। প্রকৃতপক্ষে
ডায়েটিং স্বাস্থ্য সচেতনতার অপরিহার্য অংশ। এ যুগে মানুষ শরীরের ওজন নিয়ে যথেষ্ঠ সচেতন। তবে অনিয়মতান্ত্রিক ডায়েটিং এর ফলে
শরীরে নানা রকম রোগ বাসা বাঁধছে এবং অল্প সময়ে কেড়ে নিচ্ছে জীবনী শক্তি। যে উদ্দেশ্যে মানুষ ডায়েটিং করে সেটি পূরণ তো হচ্ছেই না বরং
অকালেই চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ পড়ে যাচ্ছে। তাই এ ধরনের ক্ষতিকারক ডায়েটিং না করে পরিমিত লো ক্যালরী জাতীয় খাবার সাথে প্রচুর পানি
পান করার মাধ্যমে শরীরকে মেদমুক্ত ও রোগমুক্ত রাখা সম্ভব। যেহেতু ইটিং ডিসঅর্ডার একটি মানসিক রোগ তাই মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
নেয়া প্রয়োজন। রোগের সঠিক কারণ নির্ণয়ের মাধ্যমে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহন করলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
আহারজনিত মানসিক সমস্যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। বংশগত কারণ প্রধান। বাবা মা ভাই বোন কারো মধ্যে আহারজনিত মানসিক সমস্যা
থাকলে, পারিবারিক অশান্তি, প্রিয়জনের মৃত্যু, দৈহিক সচেতনতার মাত্রা অধিক হারে বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি কারনে সৃষ্ট মানসিক চাপ থেকে এ রোগ
হতে পারে। ইদানিং আমাদের দেশে নানা প্রকার সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে তাই কম বয়সী তরুন তরুনীদের মধ্যে আকর্ষনীয় ফিগার তৈরির
একটা অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতা চলছে। লেখাপড়ার চেয়ে শারীরিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেই তরুণ তরুণীরা বেশি সময় ব্যয় করছে। আকর্ষনীয় দৈহিক
গড়নের অধিকারী হওয়ার নেশায় কম খাবার গ্রহন করে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা তৈরি করছে। ফলে তরুন প্রজন্মের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ
অনেকক্ষেত্রে হুমকীর সম্মুখীন হচ্ছে। বিষয়টা ভেবে দেখা এখন সময়ের দাবী!
বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন এখানে :
https://www.allsharehd.com/click-here-for-details-194/NzIy
You must be logged in to post a comment.