কমলার খোসার গুণ
কমলালেবু কম-বেশি সবাই খেতে পছন্দ করেন। স্বাস্থ্যের উপকারিতা দিক থেকেও এটি গুণ রয়েছে। এই ফলটিতে রয়েছে ভিটামিন সি। আমরা খাওয়ার সময় কমলালেবুর খোসাটি সমসময়ই ফেলে দেই। কিন্তু এটা কোনো ফেলনা জিনিস নয়। খোসা হলেও এর রয়েছে নানাবিধ ব্যবহার। দেখে নেয়া যাক কমলার খোসা কি কি কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
* অ্যাজমা ও কাশির সমস্যায় :
কমলার খোসার গুঁড়ো কাশির সমস্যা দূর করে। এছাড়াও শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা ও অ্যাজমা উপশমে এটি কাজে লাগে। এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কমলার খোসায় তৈরি চা নিয়মিত পান করুন।
* কফ ও পিত্তের সমস্যায়:
কফ ও পিত্ত সমস্যার সমাধানে কমলার খোসা উপকারী। কমলার খোসা পাতলা করে ছিলে গ্রেটারে ঘষে নিন। খোসার কুচিগুলো রঙ চা তৈরির সময়েই ঢেলে দিন। এর সাথে অল্প পরিমাণে আদা দিতে পারেন। এবার পানি ফুটিয়ে আদা ও কমলার গন্ধ ছড়ালেই চায়ের মতো পান করুন। চাইলে মধুও মেশাতে পারেন।
* অ্যাসিডিটি দূর করতে:
কমলার খোসার তেলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি রয়েছে যা পেটের অ্যাসিডিটি দূরীকরণে সহায়তা করে। এছাড়াও এতে ডি-লিমোনেন নামের একটি উপাদান আছে যা অন্ত্র ও লিভার ফাংশনকে স্বাভাবিক রাখে। আর এর তেল পানিতে দু’ফোঁটা মিশিয়ে পান করলে অ্যাসিডির সমস্যা একেবারেই চলে যাবে।
* ওজন কমাতে:
উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরলের সমস্যা ও ওজন কমানোর জন্য কমলার খোসা অনেক বেশি কার্যকরী। কারণ এতে ট্রাইগ্লিসারাইড দ্রবীভূত থাকে যেটি সমস্যাগুলো দূর করতে সাহায্য করে।
* ত্বকের কালো দাগ দূর করার উপায়:
১ টেবিল চামচ টক দই, ১/২ চামচ মধু, ১ চা চামচ কমলার খোসা বাটা এক সঙ্গে মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে ত্বকে লাগান। ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে প্যাকটিতে এক চা চামচ অলিভ ওয়েল বা নারিকেল তেল মিশিয়ে নিতে পারেন।
* ব্ল্যাকহেডস দূর করতে:
২ চা চামচ দই এবং ২ চা চামচ কমলার খোসার গুঁড়া একটি ডিমের সাদা অংশের সাথে মিশিয়ে পেস্ট করে নিন। যেসব স্থানে ব্ল্যাকহেডস হয়েছে সেখানে লাগিয়ে হালকা ম্যাসাজ করুন। ১৫ মিনিট পর হালকা ম্যাসাজ করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে ব্যবহার করলে ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে সমস্যা কমে যাবে।
* ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি:
কমলার খোসা বাটা ১ টেবিল চামচ, ১/২ টেবিল চামচ হলুদের গুঁড়া, ১/২ টেবিল চামচ মধু এবং ১/২ চা চামচ জয়ফলের গুঁড়া নিয়ে পেস্ট বানানি মুখে লাগান। ২০মিনিট রেখে হালকা ম্যাসাজ করে হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। পরে ময়শ্চারাইজার লাগান।
* জানালা এবং ফ্লোর পরিষ্কারক হিসেবে:
একটি গ্লাসের জারে কমলার খোসা রেখে তাতে ভিনেগার ঢালুন। এটিকে ঢেকে কয়েক সপ্তাহ ফ্রিজে রেখে দিন। মাঝে মাঝে এটি নেড়ে দিন। পর বের করে ছেঁকে নিয়ে একচি স্প্রে বোতলে ঢালুন। জানালা ও ফ্লোর পরিষ্কারক হিসেবে এটি ব্যবহার করতে পারেন।
জলপাই পাতার রস
জলপাই তার নানাবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য সুপরিচিত এবং এটি রান্নায় ও সৌন্দর্য কাজে ব্যবহার করা হয় ব্যাপক ভাবে। কিন্তু জলপাই পাতা উপেক্ষিতই থেকে গেছে। প্রাচীন মিশরে ঔষধ হিসেবে প্রথম ব্যবহার করা হয় জলপাই পাতা এবং জলপাই পাতা ছিল স্বর্গীয় শক্তির প্রতীক। ১৮০০ শতকের গোড়ার দিকে জলপাই পাতার রস জ্বর কমাতে ব্যবহার করা হত।
১৮০০ শতকের মধ্যভাগে ম্যালেরিয়া নিরাময়ে চায়ের সাথে ব্যবহার করা হত এই রস। ১৯০০ শতকের প্রথম দিকে এর অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল উপাদানের জন্য মনোযোগ আকর্ষণ করে। বিভিন্ন গবেষণায় জলপাই পাতার ঔষধি গুনাগুণ প্রমাণিত হয়েছে।
জলপাই পাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিইনফ্লামেটরি, অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে। এই ৪টি কারণে জলপাই পাতার রস আপনার ত্বককে স্বাস্থ্যকর, তরুণ ও সুন্দর করে। জলপাই পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলো হচ্ছে :
১। সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করে
যদি আপনাকে দীর্ঘক্ষণ সূর্যরশ্মির সংস্পর্শে থাকতে হয় তাহলে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাবে আপনার ত্বক স্থিতিস্থাপকতা হারায় এবং ত্বকের পুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে জলপাই পাতার নির্যাসে ওলিউরোপেইন নামক উপাদান থাকে। এটি ত্বকের পুরো হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে এবং মেলানিনের উৎপাদনকে ধীরগতির করে।
২। ক্যান্সাররোধক হিসেবে কাজ করে
গবেষণায় দেখা গেছে যে জলপাই পাতার রস ক্যান্সার কোষের প্রজননকে ধীর গতির করার মাধ্যমে ত্বকের টিউমারের বৃদ্ধি কমতে সাহায্য করে। অন্য একটি গবেষণায় দাবী করা হয়েছে যে জলপাই পাতার রস ব্রেস্ট ক্যান্সার কোষের কার্যকারিতা কমাতে পারে।
৩। অ্যান্টি এজিং উপাদান আছে
যেহেতু জলপাই পাতার রস ত্বক পুরো হয়ে যাওয়া ও ত্বকের ইলাস্টিসিটি নষ্ট হওয়া রোধ করতে পারে সেহেতু ত্বকের অকালবার্ধক্য প্রতিরোধে ও বলিরেখা দূর করতেও অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে জলপাই পাতার রস। কারণ এতে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।
৪। ক্ষত ভালো করে
২০১১ সালে মেডিসিনাল প্ল্যান্ট নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায় যে জলপাই পাতার নির্যাস সাধারণ অয়েন্টমেন্টের চেয়ে দ্রুত ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে। কারণ এতে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। ছোট কোন কাটা ছেঁড়া ও ফুসকুড়ির মধ্যে জলপাই পাতার নির্যাস দিলে দ্রুত ভালো হয়ে যায়।
৫। চুলের জন্য উপকারি
জলপাই এর রসের মতোই জলপাই পাতার রস ও চুলকে মসৃণ এবং উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। এই রস চুলের গোড়ার ফলিকলের মধ্যে প্রবেশ করে চুলকে আর্দ্র রাখতে ও দীপ্তিময় করতে সাহায্য করে।
৬। রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে বলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জলপাই পাতার রস ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি শুধু কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেমকেই স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করেনা বরং সাধারণ ঠান্ডা ও জ্বরের উপসর্গ কমতেও সাহায্য করে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে বয়স জনিত রোগ যেমন- ডিমেনশিয়া ও আলঝেইমার্স এর উপসর্গ কমতে সাহায্য করে জলপাই পাতার নির্যাস। আরথ্রাইটিসের প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে কাজ করে জলপাই পাতার রস। এছাড়াও জলপাই পাতার নির্যাস রক্তচাপ কমায় ও খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে সাহায্য করে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
জলপাই পাতা সংগ্রহ করে ভালোভাবে ধুয়ে নিয়ে ১৫০ বা তার নীচের তাপে বেক করে নিন। তারপর এগুলোকে গুঁড়া করে ছেঁকে রাখুন। এক কাপ গরম পানিতে ১ টেবিলচামচ শুকনা জলপাই পাতার রস মিশিয়ে ১০ মিনিট জ্বাল দিন। উপকারিতা লাভের জন্য প্রতিদিন এক কাপ জলপাই পাতার রসের চা পান করুন। স্বাদ যদি তিক্ত মনে হয় তাহলে এর সাথে মধু বা লেবু মিশাতে পারেন।
সতর্কতা :-
সাধারণত জলপাই পাতার রস নিরাপদ এবং কোন মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়না। তবে যারা প্রেগনেন্ট ও ব্রেস্ট ফিডিং করান তারা জলপাই পাতার রস গ্রহণ করার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেবেন। এছাড়া ডায়াবেটিক ও ব্লাড প্রেশারের রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া জলপাই পাতার রস গ্রহণ না করাই ভালো।
Agreeable post
Nice post
Upokari post
Good post
You must be logged in to post a comment.